‘করোনায় থামবে না পড়া’ শ্লোগান নিয়ে চলতি মাসের ১ জুন থেকে শুরু হওয়া বিনামূল্যের এই শিক্ষা কর্মসূচি এখন অন্যদের কাছেও ভালো কাজের রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
এর উদ্যোক্তরা জানান, প্রাথমিকভাবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৪টি স্থানে তাদের এই বিনামূল্যের শিক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হলেও, পর্যায়ক্রমে এটি জেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাসদ, ভেড়ামারা উপজেলা শাখা ও এর ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে করোনা দুর্যোগে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে বিনা বেতনের স্কুল অদম্য পাঠশালা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ইতোমধ্যেই প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এখান থেকে শিক্ষা সুবিধা গ্রহণ করছে। বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণও বিনামূল্যে প্রদান করছে অদম্য পাঠশালা।
এই শিক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা বাসদ ভেড়ামারা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মাসুদ হাসান বলেন, ‘ধনীদের জন্য অনলাইন ক্লাস, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে গৃহশিক্ষক বা বাবা-মার কাছে পড়াশুনা করার সুযোগ থাকলেও শ্রমজীবী দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের সেই সুযোগ নেই। এদের একটা অংশ ঝরে পড়বে, আরেকটা অংশ স্কুল খোলার পর অন্যদের চেয়ে পড়াশুনায় অনেক পিছিয়ে পড়বে। সংকট দূর করতেই অদম্য পাঠশালা চালু করা হয়েছে।’
ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা নতুন পাড়া, মাধবপাড়া ও কুচিয়ামোড়া মধ্যপাড়া এবং মোকারিমপুর ইউনিয়নের মধ্য গোলাপনগরে চলছে এই শিক্ষা কার্যক্রম। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা খোলা মাঠের মধ্যে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে এখানে শিক্ষা গ্রহণ করছে। সপ্তাহে শুক্রবার বাদে ৬ দিনই দুটি ব্যাচে ক্লাস থাকছে। শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী দুটি ব্যাচের যে কোনো একটিতে অংশ নিয়ে পড়তে পারবে।
প্রতিদিন জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু করা হয় ক্লাস। ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান এবং আইসিটি বিষয়ের ক্লাস নেয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অন্য কোনো বিষয়ে সহায়তা প্রয়োজন হলে এখান থেকে সে বিষয়েও সহযোগিতা করা হয়।
বাসদ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত মেধাবী শিক্ষার্থী, যারা করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এখন গ্রামে অবস্থান করছেন তারা এবং স্থানীয় কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী এই অদম্য পাঠশালায় শিক্ষা প্রদান করছেন।
বাসদ ভেড়ামারা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক প্রভাষক মাসুদ হাসান, বিজেএম কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমান, প্রভাষক সাইফুজ্জামানসহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন বিনামূল্যের এই শিক্ষা কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এর ফলে খুব অল্প দিনেই এ শিক্ষা কর্মসূচি গোটা কুষ্টিয়া জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বাসদ ভেড়ামারা উপজেলা শাখার আহবায়ক প্রভাষক মাসুদ হাসান জানান, করোনা দুর্যোগের শুরুতেই মহামারি মোকাবিলায় দলের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা, শিক্ষা সহায়তা ও স্বাস্থ্য সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হয়। শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় এই অদম্য পাঠশালা চালু করা হয়েছে।
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যত্রম অব্যহত থাকবে বলেও জানান তিনি।